Book Review (জাল - আবু ইসহাক)
এরপর থেকে যখনি ক্রিপ্টোগ্রাফির কোনকিছু নিয়ে পড়বো কিংবা সামনে আসবে সমস্যা সমাধানে, এই বইটার কথা যে মাথায় ভেসে উঠবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারি। প্রথম কোন বাংলা উপন্যাসে এভাবে একদম পাঠ্য বইয়ের মত করে কোন cipher text ( গুপ্ত সংকেতলিপি) decipher (পাঠোদ্ধার) করতে দেখলাম। বলতে গেলে পুরোপুরি বিজ্ঞানভিত্তিক এবং বাস্তবসম্মত গোয়েন্দা উপন্যাস। কোন অশেষ সিক্সথ সেন্স ওয়ালা গোয়েন্দা না, কোন ভাগ্যবান হিরো না, একটা সাধারণ ডিটেক্টিভ দলের জাল টাকা ছাপানোর জালিয়াতি চক্রকে অসীম ধৈর্য নিয়ে ধরার কাহিনীকে ঘিরে এত মারাত্মক একটা উপন্যাস। ১৯৫০ সালের এরকম জাল নোটের কিছু চক্রকে ধরার কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা এইটা। লেখক নিজে একজন ডিটেকটিভ ছিলেন এবং ১৯৫০ সালের কেস গুলায় তিনি নিজেই তদন্তে ছিলেন। তো ১৯৫৪ সালে প্রথম বইটা লিখলেও তা প্রকাশ করেন ১৯৮৮ তে। বইতে শুধু যে চোর-বাটপার ধরা নিয়ে তাই কিন্তু না, এখানে সুন্দর একটা প্রেমকাহিনী আছে, একটা সামাজিক সমস্যারও মজাদার উপস্থাপন আছে। নিজের কাছে মনে হয়েছে, "জাল" এক বসায় পড়ে ফেলার মত বই।
এখন ব্যাপার হল এখানে যে পদ্ধতিতে সংকেতলিপির পাঠোদ্ধার করা হয়েছে, সেই একইরকম পদ্ধতি গতবছর Cryptography Lab এ করতে হয়েছিলো। সেইখানে অবশ্য ইংরেজির জন্য করেছিলাম। ইংরেজিতে সেই cipher method টার নাম ছিল Vigenere Cipher. এটা একধরনের Substitution Cipher. Substitution Cipher সেইসব cipher কে বলা হয় যেইখানে একটা অক্ষর অন্য একটা অক্ষর দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হবে। যেমন আমি HUMAN কথাটার বদলে KXPDQ লিখলাম। এখানে আমি প্রতিটা letter কে তার পরবর্তী ৩ ঘর পরের letter দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছি। এইরকম ভাবে আমার কোন বড় চিঠি থাকলে যতবার H আসবে আমি H এর জায়গায় K বসাবো। এই ধারণাটা caeser cipher এর। Caeser cipher নিজেও substitution cipher. উপন্যাসে Caeser Cipher ব্যবহার করা আছে। Vigenere আরেকটু জটিল caesar cipher এর তুলনায়। Caesar cipher এ যেমন সবসময় একটা নির্দিষ্ট letter এর জায়গায় cipher text এ কি বসাবো সেইটা ফিক্সড, vigenere এ তেমন টা না। Vigenere এ দেখা যাবে প্রথম বার H এর জায়গায় K বসলো, কিন্তু পরে আবার যখন H আসবে তখন k না বসে অন্য কোন letter বসবে। এটা একটু কমপ্লেক্স মেথড। আগ্রহীরা চাইলেই youtube video দেখলে সহজে বুঝে যাবে। Cryptography এর জগত অনেক বড় আর মজার। এত এত method আর উপায় একটা text কে cipher করার। কেউ ধৈর্য নিয়ে পড়লে এর প্রেমে পড়ে যাবে।
তো উপন্যাসে letter frequency থেকে letter prediction এর ব্যাপার ছিল যেটা ল্যাবেও করতে হয়েছে। বাংলায় যেমন "া " (আ কার) সব চেয়ে বেশি দেখা যায়, এরপর "ে" (এ কার), তারপর তৃতীয়তে আছে "র"। একইভাবে ইংরেজিতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় "e", এরপর "t" , এরপর "a". এভাবে এখন যদি ciphertext analysis করে সবচেয়ে যে letter টা অথবা চিহ্নটা বেশিবার আছে সেইটা পাওয়া যায়, তাহলে এটুকু ধরা যায় এইখানে "e" বসবে অথবা "আ" কার বসবে (বাংলার ক্ষেত্রে)। এভাবে করে ধীরে ধীরে সবটুকুই বের করে ফেলা সম্ভব। বাংলার ক্ষেত্রে আরও অনেক নিয়মের কথা বলা আছে। যেইগুলা মূলত কার অথবা ফলা চিহ্নের জন্য। ইংরেজিতে এই সমস্যাটুকু ছিল না।
শুধু cryptography তেই শেষ না। এখানে steganography ও আছে। Steganography হলো সেই পদ্ধতি যেখানে আসল তথ্যকে ছদ্মবেশে রাখা হয় বা লুকিয়ে রাখা হয়। দেখা যাবে লেখা আছে এক কথা, কিন্তু তার আসল অর্থ ভিন্ন। আবার কোন ছবি দিয়ে এমন কিছু বুঝানো আছে যা কেউ খালি চোখে সহজ দেখায় বুঝবে না। আবার কোন ধাঁধা দিয়ে কোন তথ্য গোপন করা আছে। তাই চোখের সামনে থেকেও অদৃশ্যমান। পুরোটা মিলিয়ে বইটা জমজমাট। এই বছরে পড়া প্রথম বই। ২০১৭ সালের বইমেলাতে কিনেছিলাম। ৪ বছর পর পড়লাম। আমি একদম দীর্ঘসূত্রিতার গুরু যাকে বলে আরকি।
Comments
Post a Comment